সোমবার ছিল আমজাদের কিস্তি দেওয়ার নির্ধারিত দিন। দেড় হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ১১টা পর্যন্ত। তাই সকালে না খেয়েই সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন আমজাদ হোসেন। কিস্তি পরিশোধের পর পরিবারের জন্য বাজার নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু আমজাদের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। কিস্তির টাকা জোগাড় হওয়ার আগেই ট্রাকের সঙ্গে সিএনজির সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে আমজাদসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন।
প্রত্যক্ষদর্শী আমির হোসেন জানান, যাত্রী নিয়ে অটোরিকশাটি জয়পুরহাট থেকে ক্ষেতলালের দিকে যাচ্ছিল। পথে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় অটোরিকশাটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান। আর তিনজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। আহত এক নারীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা আমজাদের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বিবি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, না খেয়েই ও (আমজাদ) সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। আর কোনোদিন আমার কাছে খেতে চাইবে না। ও আর আমার খোঁজও নেবে না। এখন আমি কীভাবে কিস্তির টাকা দেব, আর কীভাবেই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিন পার করবো।
আমজাদের স্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্বামীও গেল, আর সংসার চালানোর গাড়িও (সিএনজি) গেল। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী অরুপ কাজী জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে আমজাদ সিএনজিটি ক্রয় করেছিল। সিএনজি চালিয়েই আমজাদ সংসার চালাতো। মাঝেমধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা নিয়ে তার পরিবারে ঝগড়া-বিবাদও হতো। তবে আমজাদ খুব চাপা স্বভাবের ছিল।
ক্ষেতলালের সিএনজি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়ি থেকে বের হয়ে সকালে উপজেলার সিএনজি স্ট্যান্ডে আসেন আমজাদ। এরপর যাত্রী জয়পুরহাট ছুটে যান তিনি। জয়পুরহাট থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে ক্ষেতলালের উদ্দেশে রওনা হন আমজাদ। কিন্তু ফেরার পথে পৌরশহরের মালিপাড়া এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে আমজাদসহ সিএনজির ৪ যাত্রী প্রাণ হারান।