সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (বর্তমানে পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
মুঠোফোনে নর্থইস্ট নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের গুলিতে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় নিহত এসব মানুষের বেশিরভাগই তরুণ ও শিক্ষার্থী।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত জুলাই থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা। শুরু থেকে সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলেও পরে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।
১৫ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের দমাতে লাঠি, টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
১৬ জুলাই গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু হলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রাণ হারান বহু মানুষ। এমন অবস্থার মধ্যে পরবর্তীতে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে।
সেই থেকে গত ৫ আগস্ট সরকার পতন এবং পরবর্তী সহিংসতায় কত মানুষ আহত হয়েছে তার সঠিক হিসাব সরকারের কাছে নেই।
তবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতন আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিহত ব্যক্তিদের যাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বা মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে-সে সংখ্যাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু নিহত ব্যক্তিদের অনেককে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি, এমনকি ময়নাতদন্ত হয়নি-এ সংখ্যাটাও অনেক বড়। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজারই হবে।
নর্থইস্ট নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে মরিয়া শেখ হাসিনা মানুষের জীবনের কোনো পরোয়া করতেন না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও এই হত্যাযজ্ঞ চালানোর নেপথ্য কারিগর ছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), আনিসুল হক (সাবেক আইনমন্ত্রী) ও ওবায়দুল কাদেরের (সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) মতো শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য।’
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর অসংখ্য পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের শান্ত করতে টানা পাঁচ ঘণ্টা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হয় আমাকে। তারা কাকে হত্যা করেছে এবং শেখ হাসিনা সরকারের কে তাদের এমন নির্দেশ দিয়েছেন, তা আমি জানতে চেয়েছিলাম। এটা শুনে অনেক পুলিশ সদস্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা ও অপরাধবোধের অংশ হিসেবে তাদের কেউ কেউ আমাকে আলিঙ্গনও করেন।’