ঢাকা২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থ বানিজ্য
  2. আইন আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. ইসলাম
  6. এভিয়েশন
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলা
  9. জব মার্কেট
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশবাংলা
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল
বিজ্ঞাপন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নবীজির শুভাগমনে সৃষ্টিকুলের আনন্দ

জনবার্তা প্রতিবেদন
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ ৫:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশ্ব যখন অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল, ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলা হেদায়াতের আলোক প্রদীপরূপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-কে। তাঁর শুভাগমণে সৃষ্টিজগতে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। যেন আসমান জমিনের সবকিছু তাঁরই আগমনের প্রহর গুণছিল।

প্রসিদ্ধ বর্ণনামতে, বিশ্বনবী (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় পবিত্র মক্কা নগরীর কোরাইশ বংশের হাশেমি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে এবং নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

দুর্ভিক্ষ, অনাবৃষ্টি ও খাদ্যাভাবে জর্জরিত আরবে জন্মগ্রহণ করেন নবীজি (স.)। তাঁর বরকতময় জন্মের বছর ফলে-ফুলে, পত্র-পল্লবে সজীব হয়ে ওঠেছিল। আরবের ঘরে ঘরে আনন্দের ফল্গুধারা বইতে থাকে। একই বছর আবরাহার বিরুদ্ধে জয়লাভ এবং দুর্ভিক্ষ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ায় কোরাইশরা নবীজি (স.)-এর শুভজন্মের এ বছরকে ‘সানাতুল ফাতহ ওয়াল ইবতিহাজ’ (বিজয় ও আনন্দের বছর) হিসেবে নামকরণ করেছিল। ফাতিমা বিনতে আবদিল্লাহ (রা.) বলেন, যখন প্রিয়নবী (স.)-এর শুভাগমন ঘটল, তখন আমি আমেনার কাছে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম সব গৃহ উজ্জ্বল আলোতে ভরে গেছে এবং এ-ও দেখলাম, আসমানের তারকারাজি এত কাছে এসেছে যে আমার মনে হলো এই তারকা আমার ওপর পতিত হবে। (ফাতহুল বারি: ৬/৪২৬)

ইরবাস ইবনে সারিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.)-এর শুভ জন্ম গ্রহণকালীন সময়ে তাঁর মাতা এক নুর দেখেন, যাতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়ে যায়। (ইমাম হাকেম, আল মুসতাদরাক, মেশকাত: ৫৭৫৯)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আমি তোমাদের আমার প্রাথমিক বিষয় সম্পর্কে বলছি। আমি হলাম ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া ও ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ। আর আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসব করার সময় দেখেছিলেন যে এমন এক নুর উদ্ভাসিত হয়েছে, যার দ্বারা আমার আম্মাজানের জন্য সিরিয়ার প্রাসাদও উজ্জ্বল হয়েছিল। (ইমাম বায়হাকি, দালায়েলুন নবুয়ত, পৃষ্ঠা-৩৫)

রাসুল (স.)-এর শুভাগমনের সময় আশ্চর্য ঘটনার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে হাসসান বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমি সাত বা আট বছরের শিশু ছিলাম, আমি যা দেখতাম এবং শুনতাম তা অনুধাবন করতে পারতাম। একদিন সকালে এক ইহুদি চিৎকার করে বলতে লাগল, হে ইহুদি সম্প্রদায়, তোমাদের জন্য ধ্বংসের কথা হলো যে আহমদ এর তারকা উদিত হয়েছে, আজ রাতেই তার শুভাগমন ঘটেছে। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, মক্কা শরিফে এক ইহুদি বাস করত। যে রাতে প্রিয় রাসুল (স.) তাশরিফ এনেছিলেন তখন সে বলল, হে কোরাইশ দল, আজ রাতে কি তোমাদের কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করেছে? তারা বলল, আমাদের জানা নেই। তখন সে বলল, দেখো, আজ এই উম্মতের নবী তাশরিফ এনেছেন। যাঁর দুই স্কন্দের মাঝে নবুয়তের চিহ্ন রয়েছে। তিনি দুই রাত পর্যন্ত দুধ পান করবেন না। লোকজন দ্রুত ওই সভা থেকে উঠে অনুসন্ধান শুরু করল। জানা গেল যে আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ঘরে একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। ইহুদি বলল, তোমরা আমাকে নিয়ে গিয়ে দেখাও। ইহুদি তার দুই বাহুর মাঝখানে ওই মোহরে নবুয়ত চিহ্ন দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। জ্ঞান ফিরে আসার পর সে বলল, নবুয়ত বনি ইসরাঈল থেকে চলে গেছে। হে কোরাইশ সম্প্রদায়, শোনো, এই নবীর ওসিলায় তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তাঁর শুভাগমনের সংবাদ পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ছড়িয়ে পড়েছে। (ইমাম হাকেম, আল মুস্তাদরাক: ৪১৭৭)

পবিত্র কোরআন মজিদে প্রায় ১০টি সুরায় রাসুল (স.)-এর শুভাগমন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবজাতি, তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (বোরহান) অকাট্য প্রমাণ এসেছে, আর আমি সমুজ্জ্বল আলোকময় নুর পাঠালাম।’ (সুরা আন নিসা: ৪১)

তাফসিরে কবির, তাফসিরে রুহুল বয়ান প্রভৃতি তাফসির গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, বোরহান বা অকাট্য প্রমাণ বলে নবীজি (স.)-কে বোঝানো হয়েছে। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ঈমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬৪)

মহানবীর জন্মক্ষণে পারস্য সম্রাট কিসরার রাজপ্রাসাদে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছিল। এই ভূমিকম্পের দরুন রাজপ্রাসাদের ১৪টি গম্বুজ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। পারস্যের এক অগ্নিকুণ্ড, যা এক হাজার বছরব্যাপী বিরতিহীনভাবে জ্বলছিল তা সেই শুভ মুহূর্তে হঠাৎ নিভে যায়। সাওয়াহ নামক এক নদীতে যথারীতি পানি প্রবাহিত হচ্ছিল, নবীর আগমন মুহূর্তে হঠাৎ তার অথৈ জলরাশি শুকিয়ে যায় (সিরাতে মুস্তফা: ১/৬৯) প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল অগ্নিপূজাসহ সব ভ্রান্তির অবসানের ইঙ্গিত।

জন্মের পর নবজাতক মুহাম্মাদ (স.)-কে দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি তাকে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হন। তাকে নিয়ে কাবায় প্রবেশ করেন, একটি দুম্বা জবাই করেন এবং তার নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’ অর্থাৎ প্রশংসিত। যে নাম নবীজির জন্য যথার্থ ছিল। কেননা তাঁকে সৃষ্টিজগতের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছিল। এজন্যই সৃষ্টিকূলে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল তাঁর শুভাগমণে। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা- হে নবী (স.) আমি আপনাকে সমগ্র জাহানের জন্য একমাত্র রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)

আসুন, বিশ্বনবীর সুমহান আদর্শকে সর্বত্র বাস্তবায়ন করে, তাঁর আবির্ভাবের উদ্দেশ্যকে সফল করে, বিশ্ব শান্তি স্থাপন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে, জগৎ ও জীবনকে আনন্দময় করে তুলি। প্রভুর ইচ্ছা পূর্ণ করি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি তাঁর রাসুল (স.)-কে সঠিক পথনির্দেশ ও সত্য বিধান সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি তাঁকে সব বিধানের ওপর বিজয়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা ফাতহ: ২৮)