ভোটে হেরেও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার দখলে নিয়েছিলেন নিপুণ আক্তার। তার পক্ষে রায়টা উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ দিলেও এতে নাকি কলকাঠি নেড়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিম। নিপুণকে জেতাতে তিনি নাকি ১৭ বার ফোন করেছিলেন নির্বাচন কমিশনারকে।
তবে শুধু শেখ সেলিম নয়, আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ আলোচিত এই নায়িকাকে শিল্পী সমিতির শীর্ষ পদে বসাতে নাকি হস্তক্ষেপ করেছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও! তিনিও নাকি একাধিকবার ফোন করেছিলেন নির্বাচন কমিশনারকে। শেখ সেলিম এবং কামালের উদ্দেশ্য ছিল অভিন্ন।
চোখ কপালে ওঠার মতো এমন দাবি করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে থাকা অভিনেতা ও সরকারি কর্মকর্তা পীরজাদা শহীদুল হারুন।
ওই নির্বাচনে নিপুণকে ১৩ ভোটে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের উপর মহলের সঙ্গে নিপুণের সখ্যতা এবং প্রভাবের কারণে ভোটে জিতেও সমিতির চেয়ারে বসতে পারেননি জায়েদ। তার প্রার্থিতা বাতিল করে সে সময় নিপুণকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচনি আপিল বোর্ড।
এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জায়েদ খান। সেখান থেকে নিজের পক্ষে রায়ও পান। তবে নিপুণ উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে রিট করলে ঘুরে যায় পাশার দান। অদৃশ্য শক্তির বলে রায় নিজের পক্ষে করে নেন নিপুণ। ভোটে হেরেও দুই বছর প্রতাপের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।
নিপুণের সেই অদৃশ্য শক্তি ছিলেন শেখ সেলিম ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ তথ্য নিশ্চিত করে তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাহা হারুন বলেন, নিপুণকে জেতাতে তাকে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম। এরপর একই উদ্দেশে ফোন করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে হারুন বলেন, ‘২০২২ সালের নির্বাচনে যখন ভোট গণনা করা হচ্ছিল, তখন শেখ সেলিম ১৭ থেকে ১৯ বার আমাকে ফোন করেছিলেন। আমার সঙ্গে তার কয়েকবার কথাও হয়েছে। ওই রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আমাকে একাধিকবার ফোন করেছিলেন। তাদের দুজনের উদ্দেশ্যই ছিল এক, নিপুণকে জেতানো।’
তবে কারও ফোনেই তিনি অন্যায় পথে হাঁটেননি বলে দাবি করেন পীরজাদা শহীদুল হারুন। তার অভিযোগ, ‘পরে আমাকে মোবাইল ফোনে ভয় দেখানো হয়। এমনকি বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানো হয়। তাতেও যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হলো, ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।’
এসব খবর প্রকাশ হওয়ার পর চিত্রনায়িকা নিপুণকে নিয়ে ছি ছি পড়ে গেছে চলচ্চিত্র মহলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হচ্ছে ব্যাপক সমালোচনা। সেখানে নিপুণের এহেন হীন-মানসিকতার জন্য তার শাস্তির দাবি করেছেন অনেকে। এমনকি এই নায়িকাকে অভিনয় জগতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার দাবিও তুলেছেন নেটিজেনদের একাংশ।