খুলনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দর আরও সচল হবে। এর ফলে ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। মোংলা, পায়রা, বেনাপোল, ভোমরা বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতু এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও খুলনাঞ্চল সমৃদ্ধ হবে। এখন এ অঞ্চলের যেসব সড়ক রয়েছে সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণ করা দরকার। এজন্য তিনি সড়ক বিভাগকে নতুন নতুন প্রস্তাবনা সরকারের কাছে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ অঞ্চলের কোনও প্রস্তাবনা গেলে তিনি সেটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবেন। মাওয়ায় পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দর প্রাণ ফিরে পাবে। আরও কার্যকরী হবে এসব সমুদ্র ও স্থল বন্দরগুলো।
খুলনা মহানগরীর সদর থানার ময়লাপোতা এলাকার সন্ধ্যা বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী মানিক শেখ বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ অর্জনের নাম পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে ঋণী করেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু ও কারুকলা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া আফরিন বলেন, শেখ হাসিনার এ ঋণ যুগ-যুগ ধরেও শোধ করা যাবে না।
নগরীর ভ্রাম্যমাণ সত্তরোর্ধ সবজী বিক্রেতা মোতালেব মিয়া এ অঞ্চলের মানুষের অতীত দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, এক সময় খুলনা থেকে গাজী রকেটে বা লঞ্চে করে ঢাকায় যেতে হতো। সড়ক পথে যেতে পার হতে হতো ছয়টি ফেরি। এখন রয়েছে একটি ফেরি। সেখানেও তিন, চার অথবা পাঁচ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় বসে থাকতে হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক কষ্ট করে এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, অওয়ামী লীগ বুঝি না, বিএনপি বুঝি না। তবে শেখ সাহেবের বেটি শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করে দেশের অনেক উন্নতি করেছেন।
নারী উদ্যোক্তা সুলতানা শিলু প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, পদ্মা ফেরিতে দুর্ভোগ আর হয়রানির শেষ ছিল না। একবার আমি ডাকাতের কবলে পড়ে যাই। পদ্মা সেতুর কারণে আমি আমার দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পাই। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে নারীরা এ ধরনের জটিলতা ও হয়রানির শিকার হবে না। ঢাকায় কোনও সভা বা মিটিং থাকলে দিনের ভেতরেই তা সম্পন্ন করে চলে আসতে পারবে। থাকা ও খাওয়া নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হবে না। তাই প্রধানমন্ত্রী ও পদ্মা সেতুর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের পক্ষ থেকে আবারো ধন্যবাদ জানাই।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি পুন:বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এবং খুলনা জেলা সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মধু।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন সহজে করা যাবে দেশের অন্যসব অঞ্চলে। বাড়বে ট্রানজিট সুবিধাও। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটবে। মোংলা ইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য যেমন বিদেশি আসবে তেমনি সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের জন্যও বিমান বন্দর জরুরি। পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে জাপা নেতা মধু বলেন, দেশের মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোনও রাজনীতি করা উচিত নয়।
সূত্র : বাসস