ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়৷শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর বিবিসি ওয়ার্ল্ডকে এক বক্তব্য দেন জয়৷সেখানে তিনি জানান, শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ আর রাজনীতিতে ফিরছেন না। আবার একদিন পরেই বক্তব্য পাল্টান তিনি। টানা ৫ দিন, ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
৫ আগস্ট সরকার পতনের দিনে বিবিসি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) এতোটাই হতাশ যে তার কঠোর পরিশ্রমের পরও কিছু লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছেন।
তিনি জানান, তার মা রোববার (৪ আগস্ট) থেকেই পদত্যাগ করার কথা বিবেচনা করছিলেন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জোর দেওয়ার পর তিনি নিজের সুরক্ষার জন্য দেশ ছেড়েছেন।
জয় আরও বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। যখন তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত ছিল। এটি একটি দরিদ্র দেশ ছিল। কিন্তু আজ বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান বাঘ হিসেবে বিবেচিত। তিনি খুবই হতাশ।
এতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। তৃণমূল আওয়ামী লীগও সরকার পতনের ফলে বিভিন্ন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। প্রাণ গেছে অনেক ক্ষমতাবান নেতার।
আরেক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি মোটেও দেশ ছেড়ে যেতে চাননি। কিন্তু আমরা জোর দিয়েছিলাম যে দেশ তার জন্য আর নিরাপদ নয়। আমরা প্রথমে তার শারীরিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম। তাই আমরা তাকে চলে যেতে রাজি করাই।
তিনি আরও বলেন, আমি আজ সকালে তার সঙ্গে কথা বলেছি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অরাজক। তিনি ভালো আছেন কিন্তু তিনি খুবই হতাশ। এটা তার জন্য খুবই হতাশাজনক। কারণ বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার স্বপ্ন ছিল তার। তিনি গত ১৫ বছর ধরে এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আলোচনা ওঠে প্রথমে ইংল্যান্ড এবং পরে ফিনল্যান্ডের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
৭ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কোথাও আশ্রয় চাননি।’
তিনি বলেন, ৭৬ বছর বয়সী হাসিনা যেভাবেই হোক অবসর নেওয়ার কথা ভাবছেন এবং এখন তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন ও নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ‘নীরবতা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হাসিনার ভিসা বাতিল নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, তার (হাসিনার) আশ্রয় চাওয়ার প্রতিবেদনগুলো ভুল। তিনি কোথাও আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করেননি। তাই (তার আশ্রয়ের বিষয়ে) যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের এখনও সাড়া না দেওয়ার প্রশ্নটি সত্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।
জয় বলেন, বাংলাদেশে তার (হাসিনার) রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে… আমার মা যেভাবেই হোক অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, এটিই তার শেষ মেয়াদ ছিল।
তিনি আরও বলেন, তাদের পরিবার এখন একসঙ্গে সময় কাটানোর পরিকল্পনা করছে – তবে সেটা কোথায় এবং কীভাবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তার ভাষায়, আমি ওয়াশিংটনে আছি, আমার খালা লন্ডনে, আমার বোন দিল্লিতে থাকে, তাই আমরা জানি না, তিনি হয়তো এই জায়গাগুলোর মধ্যে ভ্রমণ করতে পারেন।
একদিন আগেই শেখ হাসিনা পুত্র যেখানে জানালেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি থেকে অবসন নেবেন। সেখানে একদিন পর সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, শেখ হাসিনা আবারও রাজনীতিতে ফিরছেন।
৮ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) টেলিফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জয় জানান, শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরবেন।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। তবে একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে ফিরবেন কি না এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে ছেড়ে যাবে না। আওয়ামী লীগের কাউকেও ত্যাগ করবে না।
এরপর গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন, তার মা পদত্যাগ করেননি।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় এ দাবি করেন।
শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, আমার মা ভুল কিছু করেননি। তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছে। তার মানে এই নয় যে- আমার মায়ের নির্দেশেই এ কাজগুলো করেছে। যারা এসবের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময় তিনি পাননি। একটি বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু এরপর আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো এবং তখন আর সময় ছিল না। এমনকি আমার মা গোছানোর সময়টুকুও পায়নি। সংবিধান অনুযায়ী, তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আবার ১০ আগস্ট বিএনপির সঙ্গে অতীত যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন জয়। তিনি বলেন, আসুন আমরা প্রতিশোধের রাজনীতিকে প্রশ্রয় না দেই। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই।