প্রতিটি ভোটকক্ষে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সামনে ভ্যাসলিনের ছোট কৌটা রাখা। ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ মেলাতে ভোটারের হাতে ভ্যাসলিন ঘষছেন কর্মকর্তারা। অনেকটা সময় ঘষাঘষির পরও অনেক ভোটার, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের আঙুলের ছাপ মিলছে না। এ চিত্র রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়ছে। তবে ভোট গ্রহণের গতি অনেক ধীর। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ মেলাতেই বেশি সময় চলে যাচ্ছে। গোপন কক্ষে ইভিএমে ভোট দিতে ভোটাররা সময় বেশি নিচ্ছেন।
সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্র এবং রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসারদের সামনে টিস্যু ও ভ্যাসলিন রাখা। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ে আঙুলের ছাপ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। কাউকে হাত ধুয়ে আসতে বলছেন, কাউকে লেবু ঘষে আসার পরামর্শ দিচ্ছিলেন তাঁরা।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোট গ্রহণের গতি কিছুটা কম। ইভিএমে আঙুলের ছাপ মেলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। বয়স্ক ব্যক্তি, খেটে খাওয়া লোকজনের ছাপ মিলছে না।
পুরুষ কেন্দ্রের ২ নম্বর ভোটকক্ষে নুরুল ইসলাম নামের সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তির আঙুলের ছাপ মেলাতে গলদঘর্ম হচ্ছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। অনেকক্ষণ ভ্যাসলিন ঘষেও কাজ হচ্ছিল না। অপেক্ষায় থাকা অন্য ভোটাররা বলছিলেন, ‘হাত খান ধুয়ে আইসো। এক ভোট দিতি দুই ঘণ্টা লাগলি আর ভোট দিতি হবি না।’
![ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ মেলাতে ভোটারদের সহায়তা করছেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-12%2F7158967b-85d1-4eaf-afb8-b3c27c7f1893%2F4.jpeg?auto=format%2Ccompress)
ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রীর সঙ্গে ভ্যাসলিন ও টিস্যুও দিয়েছে। ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে ভোটাররা জানেন না। এর ফলে দীর্ঘ সময় তাঁদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০১৭ সালের নির্বাচনে মাত্র একটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়েছিল। আর এবার ২২৯টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৪৯টি কক্ষের সব কটিতেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।
নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম নিয়ে প্রচার কম। ভোটাররা আগে এটি ব্যবহার করেননি। ভোটার উপস্থিতি বাড়লে নির্ধারিত সময়ে ভোট গ্রহণ শেষ করা যাবে না। আরও বড় পরিসরে এ যন্ত্র ব্যবহারের আগে আরও মূল্যায়ন দরকার।
ভোট গ্রহণ শুরুর সাড়ে তিন ঘণ্টা পরও ভোট পড়ছে কম। সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রটি পুরুষ ভোটকেন্দ্র। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ২২১টি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৫০টি। অর্থাৎ ভোট পড়েছে ১১ শতাংশ। রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ পুরুষ কেন্দ্রে ১৭ শতাংশ এবং নারী কেন্দ্রে ১৬ শতাংশ ভোট পড়েছে প্রথম সাড়ে ৩ ঘণ্টায়।
রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি মোটামুটি হলেও গতি কিছুটা কম যাচ্ছে। অনেকেই ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারছেন না।
দেখা যায়, অনেক ভোটার গোপন কক্ষে যাওয়ার পর বুঝতে পারছেন না, কী করবেন। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসাররা বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, কীভাবে ভোট সম্পন্ন করতে হবে। একজন ভোট দিয়ে বের না হওয়া পর্যন্ত অন্য ভোটারের কার্যক্রমও শুরু করতে পারছেন না দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। এর ফলে ভোটারদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
ইভিএমে ভোট গ্রহণে জটিলতার বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, কিছু কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছে। শীতকাল বলে অনেকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলাতে সমস্যা হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি আরও বাড়বে। ইভিএমের কারণে ভোট কম পড়বে বলে মনে হচ্ছে না।
![ভোটারদের দীর্ঘ সারি](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2022-12%2F3bc10b2f-0539-4dce-a23e-3b45d1bd586e%2F5.jpeg?auto=format%2Ccompress)
জোর করে ভোট দিয়ে দেওয়া প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি: রংপুরে সিইসি
এবার তৃতীয়বারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ এই সিটির ২২৯টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হচ্ছে। সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। মেয়র পদে প্রার্থী ৯ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ জন, ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন উপলক্ষে রংপুরে নির্বাচনী এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অফিসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।