ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে এক সপ্তাহ আগে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি দায়ী করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
শেখ হাসিনার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো বঙ্গোপসাগরে একাধিপত্য বাড়াতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তুলে না দেওয়ায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। খবর আনন্দবাজারের।
ভারতে পৌঁছে শেখ হাসিনার সঙ্গে যাদের কথা হয়েছে সেই সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের অনলাইন ভার্সনে বলা হয়েছে, যাতে ‘লাশের মিছিল’ দেখতে না হয় সেজন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে নামার পর একাধিকবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে দেখা হয় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভারতীয় নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক কর্তাদের সঙ্গেও তার কথা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, যতক্ষণ না শেখ হাসিনার পরবর্তী আশ্রয়ের ঠিকানা নির্ধারিত হয় ততদিন দিন নয়াদিল্লিতেই থাকবেন। নয়াদিল্লির আবাসস্থল থাকা ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি দায়ী করেছেন।
দেশত্যাগ করার আগে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে যে বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন, তাতেও এই বক্তব্যই রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।
শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো বঙ্গোপসাগরে একাধিপত্য বাড়াতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তাদের হাতে তুলে না দেওয়ার মাসুল হিসাবেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশিদের সতর্ক করেছেন, তারা যেন ‘মৌলবাদীদের দ্বারা’ পরিচালিত না হন।
ভারতে পৌঁছে শেখ হাসিনার সঙ্গে যাদের কথা হয়েছে, সেই সূত্রে জানানো হয়েছে, যেন লাশের মিছিল দেখতে না হয় সেজন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। ছাত্রদের মৃতদেহের ওপর ক্ষমতা হস্তান্তর হোক তা চাননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। চাননি দেশের আরও সম্পদ নষ্ট হোক।
শেখ হাসিনার মতে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়ে বঙ্গোপসাগরে সে দেশকে ছড়ি ঘোরাতে দিলে হয় তো তিনি ক্ষমতায় থেকে যেতে পারতেন। দেশ ছাড়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসিনা।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন, তিনি আবার নিজের দেশে ফিরে যাবেন। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আবারও দাঁড়াবে। তাঁর দলের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো খবরে তিনি ব্যথিত বলে জানিয়েছেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন হয় একতরফা, যেখানে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এই নির্বাচন আগের রাতেই ব্যালটে সিল মারার ব্যাপক অভিযোগ ছিল। এ নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়।
আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এ নির্বাচনও বিতর্কিত। এতেও প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। নিজদলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করে ‘ডামি’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আয়োজন করা হয়। এ নির্বাচনটিকে বিরোধিরা ‘ডামি নির্বাচন’ বলে আখ্যা দেন।
ছয় মাসের মাথায় ব্যাপক ছাত্র ও গণবিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।