কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হতো শিশু খাদ্য, ফ্রুটো, ম্যাংগো জুস, ড্রিংস ও স্যালাইন। পরে এগুলো বাজারজাত করা হতো খুব অল্প দামে। মোড়ক ও পণ্যের কালার দেখে বোঝার উপায় ছিল না এগুলো নকল। এভাবে একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে নকল এসব খাদ্য তৈরি করে আসছিল। অবশেষে চক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
গ্রেফতাররা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৩৮), শাহ নেওয়াজ খান (৩৩), মোরশেদুল ইসলাম (৫১), সবুজ মিয়া (২৩) ও আরিফ (২৩)।
এসময় তাদের কাছ থেকে নরমাল পানি রাখার রিজার্ভ টাংকি একটি, তিনটি ফিল্ডার, একটি আরো মেশিন, বিশুদ্ধ পানি রিজার্ভ রাখার একটি টাঙ্কি, পানি হিটার মেশিন, কেমিক্যাল মিক্সার মেশিন, বোতল ফিলিং মেশিন, কোকোনাট নাটা লিকুইট ৩০ কেজি, ড্রিংকো ফ্লোট নাটা ডি কোকো সমৃদ্ধ লিচি আর্টিফিসিয়াল ফ্লেভার ডিংক ২৫০ মিলি, এসব পণ্যের নকল স্টিকার/লেভেলযুক্ত বোতলজাত কোমল পানীয় ১ হাজার ৩২০ পিস, স্টিকার/লেভেল ছাড়া বোতল ১০০ পিচ, ড্রিংকো লোগোযুক্ত স্টিকার ১০০টি, প্যাকেটজাত করার ছিট মেশিন ৪টি, পানির টিডিএস মাপার মেশিন ১টি, কথিত এলডি পলিথিন অনুমান কেজিসহ নকল পণ্য তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (০৭ মে) রাজধানীর কদমতলীর মোহাম্মদবাগস্থ সিরাজ ছৈয়ালের ভাড়া কারখানায় তৈরি হচ্ছিল। পরে খবর পেয়ে সেই কারখানায় হানা দেয় ডিবি। সেখানে ভেজাল পানীয় দ্রব্য বাজারজাত করার সময় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (০৮ মে) দুপুরে এ বিষয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন বলেন, আমরা এর আগেও নকল স্যালাইন তৈরিকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আরেকটি চক্র গ্রেফতার হয়েছে। চক্রটি স্যালাইন ছাড়াও কোমল পানীয়, ড্রিংস, জুস, ফ্রুটো তৈরি করতো। চক্রটি নামি-দামি মোড়কে কেমিক্যাল দিয়ে ভেজাল শিশু খাদ্য তৈরি করে আসছিল। চক্রটির হোতা আনোয়ার হোসেন। তিনি আগে ইলেক্টনিক্স ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসা ছেড়ে এখন এটি করছিলেন। এছাড়াও সবুজ মিয়া আগে শনপাপড়ীর তৈরি করে বিক্রি করতেন। কিন্তু তিনিও এখন এইসব নকল পণ্য তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। তাদের কোনো লাইসেন্সও নাই, বৈধ কাগজপত্রও নাই। তারা মূলত এসব পণ্য বিক্রির জন্য ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করতো। তারা শিশু খাদ্যগুলোতে স্যাকারিন, ওয়াসার পানি, কাপড়ের রঙ, কেমিক্যাল ও আর্টিফিসিয়াল ফ্লেভার মিশিয়ে জুস, ড্রিংস, ফ্রুটো তৈরি করত। শাহনেওয়াজ ও মোরশেদুল তাদের সহায়তা করত। শাহনেওয়াজ প্রাণের ডিসট্রিবিউটর। তিনি যখন প্রাণের পণ্য বিক্রি করতেন তখন এসব পণ্য ঢুকিয়ে দিয়ে আসল বলে চালিয়ে দিতো। এজন্য তিনি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পেতেন।
তিনি আরও বলেন, তারা কারখানটিতে কেমিস্ট ছাড়াই চিনি, গ্রুকোজ, মানহীন কেমিক্যাল দিয়ে ভেজাল টেস্টি স্যালাইন তৈরি করে বাজারজাত করতো। পরে এসব পণ্য তারা ফরিদপুর, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতো। তবে তারা এসব নকল পণ্য তৈরির মালামাল ও লগোসহ অন্যান্য জিনিসপত্র মিডফোর্ড এলাকা থেকে কিনত।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অতি. উপ-পুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতি. উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম এবং তাদের টিমের সদস্যরা চক্রটিকে ধরতে কাজ করেন।