জাপানে আবারও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চলতি মাসেই দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার থেকে পরপর পদত্যাগ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ তিন মন্ত্রী। ফলে ব্যাপক রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনাও মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাকে।
এরপর গত ১১ নভেম্বর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন বিচারমন্ত্রী ইয়াসুহিরো হানাশি। সবশেষ গত রোববার (নভেম্বর) তহবিল কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্কের মুখে সরে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিনোরু তেরাদা। সোমবার (২১ নভেম্বর) সেই জায়গা পূর্ণ করেছেন তেকইয়াকি মাতসুমোতো। কিন্তু এরপরও প্রধানমন্ত্রী কিশিদার বিপদ কাটছে না। বরং সেটা চূড়ান্ত বিপর্যয় তথা সরকার পতনের দিকেই এগোচ্ছে।
দাইশিরো ইয়ামাগিওয়া সরে যাওয়ার পর পুনরুদ্ধার বিয়ষক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া কেনইয়া আকিবার বিরুদ্ধেও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ফলে খড়্গহস্ত বিরোধীরা আবারও ফুমিও কিশিদার সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে। এমনকি গত সোমবার দায়িত্ব নেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেকইয়াকি মাতসুমোতোর বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। ফলে কিশিদার পুরো মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধেই আঙুল তুলছে বিরোধীরা।
এমন অবস্থায় নতুন করে আরও দুই মন্ত্রী পদত্যাগে বাধ্য হলে প্রধানমন্ত্রী কিশিদার ক্ষমতায় চূড়ান্ত আঘাত হানতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে কিশিদার ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু সদস্য যত দ্রুত সম্ভব মন্ত্রিসভার রদবদলের আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপলের নেতা ইউচিরো তামাকি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুনরুদ্ধার বিষয়ক মন্ত্রী আকিবা যদি তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ খণ্ডন করতে না পারেন, তাহলে তাকে সরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই মন্ত্রিসভার রদবদল করতে হবে।’
কিশিদার সমালোচনায় তামাকি বলেন, ‘কিশিদা সবসময় দেরি করে সিদ্ধান্ত নেন। সেই একই জিনিস আবারও ঘটতে যাচ্ছে। কিছু আগে কিংবা পরে।’ এখন থেকে মাত্র তিন মাস আগে গত আগস্টে মন্ত্রিসভার বড় পরিবর্তন এনেছিলেন কিশিদা। কিন্তু এরপর বিভিন্ন কেলেঙ্কারির বোঝা মাথায় নিয়ে তার তিন মন্ত্রীকে বিদায় নিতে হয়েছে।
পরপর তিন মন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে রোববার (২০ নভেম্বর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কিশিদা বলেন, ‘এজন্য আমি খুব দায় অনুভব করছি।’ মন্ত্রীদের কেলেঙ্কারির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। এমনিতেই বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক জনমত জরিপে তার সমর্থন ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এই জনসমর্থন নিয়ে তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে (৮ জুলাই) পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে গিয়ে এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তার ওই হত্যাকাণ্ডের পর কিশিদার নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়ী হয় এলডিপি।
জিজ্ঞাসাবাদে আবের হত্যাকারী জানিয়েছেন, ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে সম্পর্ক ও ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীর পক্ষে প্রচারণা চালানোয় আবেকে হত্যা করেছেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই চার্চ জাপানের অন্যান্য বহু মানুষের পাশাপাশি তার মাকেও আর্থিকভাবে দেউলিয়া করেছে।
আবের মতো এলডিপির আরও বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তথা বিতর্কিত ওই ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগ উঠেছে। তবে দলটির পক্ষ থেকে চার্চের সঙ্গে সাংগঠনিক যোগসূত্র থাকার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।