ঢাকা৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৮শে জিলহজ, ১৪৪৫ হিজরি ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থ বানিজ্য
  2. আইন আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. ইসলাম
  6. এভিয়েশন
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলা
  9. জব মার্কেট
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশবাংলা
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল
বিজ্ঞাপন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চারিদিকে থৈ থৈ পানি, বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন

জনবার্তা প্রতিবেদন
জুলাই ৩, ২০২৪ ১:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তৃতীয় দফার বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। এই দফার বন্যায় ইতোমধ্যে ডুবেছে দুই জেলার বিস্তীর্ণ অনেক এলাকা। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। যে কোথাও তাকালে চোখে পড়বে শুধু পানি আর পানি। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। সময় যতই বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যাও ততই বাড়ছে।

বন্যার পানিতে জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। গো-খাদ্যের অভাবে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বন্যায় পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই জেলার কয়েক লাখ মানুষ।

গত সোমবার থেকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেটের অন্তত চারটি উপজেলা। সিলেট মহানগরেরও অনেক জায়গায় নতুন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপার, শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

একইসময় পানি বৃদ্ধির কারণে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জে গত সোমবার দিন ও রাতে অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে। গতকালও বৃষ্টি হয়েছে। একদিকে অবিরাম বৃষ্টি আর অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সবগুলো নদ-নদীর পানি বেড়ে ও নতুন নতুন এলাকা প্লাাবিত হয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত সিলেটে ৫টি নদীর পানি ৬টি স্থানে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

গত সোমবার সকাল থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত জনপদ ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নতুন করে প্লাবিত বাড়ি-ঘরের মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন বাজার তলিয়ে পানি ঢুকেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে নতুন করে ক্ষতিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা। ফলে তৃতীয় দফা ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগর ছাড়া জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলার ১ হাজার ৮১টি গ্রামে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৫০০ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এসব উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ রয়েছেন। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কন্ট্রোল স্থাপন করে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করে বন্যার্ত অসুস্থ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই সপ্তাহ ব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোররাত থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতিভারী বর্ষণে মহানগরসহ সিলেটের সব উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পরবর্তী এক সপ্তাহ সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ছিলো ভয়াবহ। এরপর পানি নামতে শুরু করে। তবে সে গতি ছিল খুব ধীর।

দ্বিতীয় দফা বন্যা শেষ হওয়ার আগেই সোমবার থেকে সিলেটে ধাক্কা দিয়েছে তৃতীয় দফা বন্যা। গত রোববার (৩০ জুন) দিনভর সিলেটে থেমে থেমে ও উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তুলিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টের পানি। সেইসঙ্গে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার নিম্নাঞ্চলে ফের সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে। এ কারণে নদী ও হাওরে পানির প্রবাহ আরও বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাহিরপুর উপজেলা। তাহিরপুর উপজেলায় রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে বেশি পানি উঠেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছে প্রশাসন। জেলার ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক তিন দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উজানের ঢলে গতকাল আবারও জেলা সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফতাব উদ্দিন জানান, উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওর, মাটিয়ান হাওর ও শনির হাওরপারের গ্রামগুলো বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢলের প্রবল তোড়ে অনেক রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজন আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সুরমা ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও একদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান, শহরে নদী ও হাওর তীরবর্তী এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও বাড়িঘরে পানি আছে। বন্যার আশঙ্কায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আবারও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।