অনেকে আন্দোলনে আসতে না পারলে অসুস্থতার ছল করেন। বিএনপির নেতারাও একইভাবে অসুস্থতার ছল করছেন, এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি কারামুক্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে তিনি এ কথা বলেছেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সোমবার রাজধানী নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। তাদের সমমনা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করেছে। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে মির্জা ফখরুল আজ বিএনপির সমাবেশে থাকতে পারেননি। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেওয়া গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমানও অসুস্থতার কারণে আজ ছিলেন না কর্মসূচিতে।
বিকেলে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর রাজধানীর ভাটারা এলাকার মাদানী অ্যাভিনিউতে (১০০ ফুট সড়ক) দলীয় এক শান্তি সমাবেশে যোগ দেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, ‘বিএনপির অসুস্থ আন্দোলন এখন হাসপাতালে। মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস অসুস্থ। আন্দোলনের কর্মসূচি খবর দিয়েই রব (জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব) অসুস্থ, মান্না (নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না) অসুস্থ। আর নুরুল নেতা তো কর্মসূচিতে আসেননি মান-অভিমান করে। বিএনপির জোটটাই ভুয়া। তাদের জোটের ৫৪টি দল ৫৪টি অশ্বডিম্ব পেড়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দুদিনে চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এটা কি আসলেই অসুস্থতা, নাকি তাঁদের রাজনীতিরই অসুস্থতা? বিএনপির নেতাদের অসুস্থতা আসলে রাজনৈতিক অসুস্থতা। তাই তো লোকে তাদের ভুয়া বলে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি নিজে অসুস্থ থাকলেও এমন অসুস্থ রাজনীতি করেননি।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা না আসার খবরেও বিএনপির নেতারা অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসছে না, এমন খবরে বিএনপির নেতারা অসুস্থ হলেন কি না, হাসপাতালে গেলেন কি না, হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আন্দোলন রেখে কেন তাঁরা হাসপাতালে?’
ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, বিএনপির ভেতরে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। নেতাদের মতের মিল নেই, পথের মিল নেই। এ ছাড়া এত এত জোট, এত এত নেতা, টিকবেন কীভাবে? তিনি আরও বলেন, আমেরিকার দূতাবাসে নালিশের পর নালিশ করেও কোনো লাভ হয়নি। ডোনাল্ড লু (দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এসে বলেছেন, দেশ অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে।
বিএনপি কবে আন্দোলন করবে, প্রশ্ন তুলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, তারা নাকি এই বছর আন্দোলন না করে ওই বছর করবে। এই বছর না ওই বছর? মানুষ বাঁচে কত বছর? কবে হবে তাদের আন্দোলন?
তাদের সবকিছুই ভুয়া দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নাকি আন্দোলনের গণজোয়ার ওঠাবে। তাদের ওই আন্দোলনের জোয়ারে এখন ভাটা নেমেছে। তাদের আন্দোলন, সরকার পতনের আন্দোলন সবই ভুয়া। হায় রে বিএনপির আন্দোলন!’
ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাই থাকবেন, সেই আশাবাদ জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতা কে? সেটা জানা নেই। নেতৃত্ব কে দেবেন, লন্ডন থেকে, নাকি ৫৪টি দল থেকে কেউ? এ নিয়ে বিএনপির বন্ধুদেরও মন খারাপ। অন্যদিকে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাঁদের জ্বলছে। হৃদয়, মন ও অন্তর জ্বলে যাচ্ছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ১০০ ফুট সড়কের এক পাশে রাস্তার ওপর নতুনবাজারের দিকে মুখ করে আলাউদ্দিন মার্কেটের সামনে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে রাস্তার মধ্যে প্রায় ৪০০ মিটার সড়কে বসানো চেয়ারে শত শত নেতা-কর্মী বসেছেন। এতে সড়কের এক পাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিপরীত পাশের সড়কে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাতে রাস্তার ওই পাশেও যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের মিছিলে প্রগতি সরণিতেও যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান বক্তব্য দেন।
মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান।