ঢাকা৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থ বানিজ্য
  2. আইন আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. ইসলাম
  6. এভিয়েশন
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলা
  9. জব মার্কেট
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশবাংলা
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল
বিজ্ঞাপন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘হিটস্ট্রোক’ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ প্রস্তুতি

জনবার্তা প্রতিবেদন
এপ্রিল ২২, ২০২৪ ২:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তীব্র দাবদাহে নাকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঠেকেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে সহসায় এ অবস্থার কোনো উন্নতির আশা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা। উল্টো আগামী দিনগুলোয় সারাদেশে আরও বেশি গরম পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। আবহাওয়ার এই চরম ভাবাপন্ন পরিস্থিতির পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরমজনিত নানা রোগ-বালাই। বিশেষ করে তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। শুধুমাত্র ২১ এপ্রিলেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এ অবস্থায় হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত রোগের বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধিসহ জরুরি সেবা নিশ্চিতের তাগিদ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করা ও আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা জানান, গরম আবহাওয়ার কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণজাতীয় পদার্থ বের হয়ে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। ফলে মানুষ অজ্ঞান হয় এবং খিঁচুনি দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ঘামাও বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটলে কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে এতে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, গরমে অনেকের হিটস্ট্রোক হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষসহ যারা একটানা রোদে কাজ করেন তারা এর ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গরমে কাজ করার ফলে একসময় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারানহাইট পার হয়ে যায়। তখন শরীর অত্যন্ত গরম হলেও ঘাম বের হয় না। রোগী মাথা ব্যথায় ভুগে এবং অজ্ঞান হয়ে যায়। এটাকে হিটস্ট্রোক বলে। এটি অত্যন্ত মারাত্মক বিপদজনক অবস্থা। এই অবস্থায় দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এমনকি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এ সময় যদি সঠিক চিকিৎসা না দেওয়া হয় তাহলে রোগী মারা যেতে পারে। এ ধরনের রোগীর জন্য যেন হাসপাতাল প্রস্তুত থাকে। সাথে সাথে যেন তাদের চিকিৎসা দেওয়া যায়।

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। ইতোমধ্যে হাসপাতালে হিটস্ট্রোকের রোগী বাড়ার শঙ্কায় স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রস্তুতির নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয়তা
তীব্র দাবদাহ ও হিট ওয়েভ পরিস্থিতিতে সারাদেশের হাসপাতালের পরিচালক এবং সিভিল সার্জনদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাপদাহের কারণে হাসপাতালগুলো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমার কয়েকটা নির্দেশনা ছিল, তার মধ্যে একটা হলো- বয়স্ক এবং বাচ্চারা প্রয়োজন ছাড়া যেন বাসার বাইরে না যায়। হাসপাতালগুলোতে কোনো কোল্ড কেস এখন ভর্তি করতে না করেছি। কোল্ড কেস অর্থাৎ এক মাস পর অপারেশন করলে অসুবিধা না হয়, সেটা দুই সপ্তাহ পরে করুক। হাসপাতাল খালি রাখার জন্য বলছি। যদি চাপ হয়, তাহলে বাচ্চা এবং বয়স্কদের জন্য যেন ভর্তি করা হয়। এখন কোল্ড কেস কয়েক দিন বন্ধ থাকবে।

ওরাল স্যালাইনের কোনো ঘটতি নেই উল্লেখ করে কোথাও কোনো ঘাটতি হলে সঙ্গে সঙ্গে জানানোর জন্যেও নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। একইসঙ্গে প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই উল্লেখ করে প্রস্তুতি রাখতে হবে বলে জানান সামন্ত লাল সেন।

এ সময় মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদাভাবে বেড রাখতে বলা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে ইমিরেটাস অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের হাসপাতাল রোগীতে সয়লাভ, ফ্লোরে রোগী থাকছে। এমনকি টয়লেটের সামনে পর্যন্ত রোগীদের স্থান দেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় হিটস্ট্রোকের মতো জরুরি রোগীদের সেবা নিশ্চিতে তিনি কোল্ড রোগীদের ভর্তি করতে না করেছেন। অর্থাৎ যে রোগীরা সেবা নিতে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে পারেন তাদের হাসপাতালে না আসার জন্য বলেছেন। এটি ভালো সিদ্ধান্ত।

গরমজনিত রোগের চিকিৎসা নিশ্চিতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গরম সংক্রান্ত সকল রোগে গুরুত্ব দিতে হবে। এ সময় ঠান্ডাজনিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি। তীব্র তাপদাহের কারণে মানুষ বাইরে বিভিন্ন শরবত পান করছে। এগুলোতে ব্যবহৃত পানি ও বরফের উৎস নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এসব পানীয় গ্রহণে মানুষ ডায়রিয়া, বমি ও টায়ফয়েডের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগের সম্ভাবনা থাকায় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে। গরমের কারণে অনেকে বাইরে ঠান্ডা শরবত, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস পান করছে। এতে টনসিলসহ নানা ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিচ্ছে। অনেকের নিউমোনিয়াও দেখা দিতে পারে। হিটস্ট্রোকের মতো এসব রোগেরও চিকিৎসা দিতে হবে।

বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন সম্প্রতি হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা নিশ্চিতে বিশেষ প্রশিক্ষণের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আবহাওয়ার দিকে আমাদের সতর্ক নজর আছে। বর্তমান অবস্থায় হিটস্ট্রোকের মতো জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। সে জন্য জাতীয় নির্দেশিকার (গাইডলাইন) খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ২২-২৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশের চিকিৎসকদের এই নির্দেশিকা ব্যবহারের ওপর অর্থাৎ হিটস্ট্রোকের রোগী চিকিৎসার প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা এ ধরনের রোগী ব্যবস্থাপনায় অভ্যস্ত। তাদের আলাদা করে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। পেরিফেরি বা মফস্বলে কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর এ বিষয়ে বিভ্রান্তিতে থাকলে তারা টেলিমেডিসিন ও অনলাইনের মাধ্যমে সিনিয়রদের সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা ভালোই।