ঢাকা১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থ বানিজ্য
  2. আইন আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. ইসলাম
  6. এভিয়েশন
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলা
  9. জব মার্কেট
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশবাংলা
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল
বিজ্ঞাপন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এবার গাজার ক্ষুধার্তদের পাশে দাঁড়ালেন ক্রিকেটার বিথী

জনবার্তা প্রতিবেদন
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ১:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইসরায়েলি আগ্রাসনে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। বিধ্বস্ত গাজায় প্রতিদিন ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় বাড়ছে লাশের পরিসংখ্যান। সঙ্গে গাজায় খাদ্যাভাবে বাড়ছে হাহাকারও। খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়া গাজায় একবেলা খাবার পাওয়া এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

গাজার ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা প্রদানে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা। সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ, আছে ব্যক্তি উদ্যোগও। তেমন একটি নাম আরিফা জাহান বিথী। গত চার মাস ধরে গাজায় আর্থিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন সাবেক এই নারী ক্রিকেটার। সহায়তার অর্থে খাবারসহ প্রয়োজনীয় পোশাক ও শিশুসামগ্রী কিনছেন গাজার বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষের জন্য।

বিথীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি অ্যান্ড হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন মনে করছে গাজার বিভিন্নস্থানে মানবিক সহায়তা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজার এতিম শিশুসহ অসহায় মানুষের জন্য সহায়তা চাইছেন আরিফা জাহান বিথী। এই সাবেক নারী ক্রিকেটার ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে ৩ বারসহ গত চার মাসে বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার অর্থ স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে গাজার নিপীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

এ কার্যক্রম প্রসঙ্গে আরিফা জাহান বিথী জানান, মানবিক এই সহায়তা গাজায় পৌঁছে দিতে ফিলিস্তিনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক মিস্টার নাওয়াল এবং বাংলাদেশের মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম তাকে সহযোগিতা করছেন। তাদের মাধ্যমে গত চার মাসে কয়েক দফায় আর্থিক সহায়তা পাঠানোর মাধ্যমে গাজার এতিম শিশু ও বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে রান্না করে খাবার পরিবেশন, পোশাক ও ওষুধের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবক।

তিনি বলেন, আমি এবং আমার সংগঠন থেকে আমরা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতায় গাজার মানুষের জন্য আমরা এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি। গাজার বেশিরভাগ মানুষ বর্তমানে তাবুতে জীবনযাপন করছে। তাদের খাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে গাজার মানুষের জন্য এগিয়ে এলে খাদ্য সংকট থেকে অনাহারের ঝুঁকি বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আরিফা জাহান বিথী আরো বলেন, প্রতিদিন গণমাধ্যমে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার মানুষের কষ্টের কথা উঠে আসছে। ইসরায়েল গাজার খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে। খাদ্যের অভাবে বাধ্য হয়ে সেখানকার কোথাও কোথাও মানুষ ঘাস পর্যন্ত খাচ্ছে। দূষিত পানি পান করেছেন। গাজায় ত্রাণের গাড়ি প্রবেশ করলে মানুষ সাহায্যের জন্য একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। একদিকে পেটে ক্ষুধা অন্যদিকে ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা। গাজাজুড়ে এখনও হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল বাহিনী। অসহায় শিশু-কিশোরদের ছবি দেখলে চোখে পানি চলে আসে, মনটা তাদের জন্য কাঁদে। তাই নিজের জায়গা থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সামান্য কিছু হলেও সহায়তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।

বিথী তার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। চাইলে এই কার্যক্রমে সামর্থ্য অনুযায়ী যে কেউ সহযোগিতা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া কেউ যদি পরিচয় গোপন রাখতে চান, তাও করা হবে। এই উদ্যোগে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে বিকাশ ও নগদ করতে পারেন ০১৮৬৭৫৭৮২৩০ নম্বরে। এছাড়া রকেটে ০১৮৬৭৫৭৮২৩০৬ নম্বরে সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৪ হাজার হাজার ২৫০ জন। এছাড়া গত অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত আরও ৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৬ জন আহত হয়েছেন বলে বুধবার ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, আরিফা জাহান বিথী ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন। ঢাকার ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার ক্রিকেট দলে ওপেনিং ব্যাট করতে নামতেন। ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিকেট ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে।

ঢাকা থেকে রংপুরে ফিরে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে নারীদের জন্য উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি নামে প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়েন বিথী। সেখানে কয়েক শ নারীকে বিনামূল্যে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।

করোনা মহামারির শুরুর দিকে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সেবার জন্য ফেসবুকে সবার কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছিলেন আরিফা জাহান বিথী। তার আহ্বানে ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, রুবেল হোসেনসহ অনেকেই সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়ান। করোনাকালীন সময়ে নিজের জমানো টাকা আর অন্যের আর্থিক সহযোগিতার সমন্বয়ে কয়েক হাজার মানুষের দুয়ারে চাল, ডাল, তেল, লবণ, ফল, দুধ, ডিম ও হরলিকসসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। তখন থেকে অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন মানুষের পাশাপাশি সন্তানসম্ভবা নারীদের সেবামূলক সহায়তা দিয়ে আসছেন তিনি। এরপর থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন এই ক্রিকেটার।

ইতোমধ্যে গত সাড়ে তিন বছরে শতাধিকের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী করেছেন বিথী। গৃহহীন বৃদ্ধা মা-বাবাকে দিয়েছেন নতুন ঘর। সহায়-সম্বলহীন শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। শুধু তাই নয় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন শরীফও বিতরণ করেছেন বিথী। গেল মাহে রমজানে জেলার ছয় হাজার রোজাদার অসহায় ব্যক্তিকে ইফতার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন সাবেক এই নারী ক্রিকেটার।