ঢাকা১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থ বানিজ্য
  2. আইন আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. ইসলাম
  6. এভিয়েশন
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলা
  9. জব মার্কেট
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দেশবাংলা
  13. বিনোদন
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল
বিজ্ঞাপন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী ষাট গম্বুজ মসজিদ

জনবার্তা প্রতিবেদন
মার্চ ৩০, ২০২৪ ৩:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী তিনটি স্থানের একটি ষাট গম্বুজ মসজিদ। মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদটি বাগেরহাটকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে পীর খানজাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয় তিনি ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

জনশ্রুতি আছে যে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত পাথর চট্টগ্রাম থেকে এনেছিলেন। আবার কারও মতে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে অলৌকিক ক্ষমতাবলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। পুরো মসজিদটি তৈরির মূল উপাদান চুন, সুরকি, কালো পাথর ও ছোট ইট। এই মসজিদের স্থাপত্যকলার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার তুঘলক (তুরস্ক) স্থাপত্যশৈলীর মিল রয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

যেভাবে নামকরণ
ষাট গম্বুজ মসজিদের নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, সংস্কৃত শব্দ সাত ও ফারসি শব্দ ছাদ এর ওপর গম্বুজ থাকায় এটি ছাদ গম্বুজ থেকে ষাট গম্বুজ হয়েছে। আবার কারও মতে, মসজিদের অভ্যন্তরে ছয়টি সারিতে ১০টি করে মোট ষাটটি পাথরের খাম্বার ওপর মসজিদের ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে বলে এর নাম হয়েছে ষাট গম্বুজ। আবার মসজিদটির ছাদ সমতল নয়, এটি গম্বুজ আকৃতির। সেই থেকে মসজিদটি ছাদগম্বুজ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে কথ্যরূপে, ষাট গম্বুজ নাম হয়েছে।

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮.৫ ফুট পুরু। ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১টি, সাত লাইনে ১১টি করে ৭৭টি এবং চার কোণায় ৪টি করে মোট ৮১টি। দক্ষিণ-পূর্ব কোণের বুরুজটির ভেতর দিয়ে ওপরে বা ছাদে ওঠার সিঁড়ি আছে। এর নাম রওশন কোঠা। আর উত্তর-পূর্ব কোণের বুরুজটি দিয়েও ওপরে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে যেটি আন্ধার কোঠা নামে পরিচিত।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে ষাট গম্বুজ বাসস্টপেজ লাগোয়া সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ। মসজিদের প্রবেশের প্রধান ফটকের ডান পাশে রয়েছে বাগেরহাট জাদুঘর। এখানে প্রাচীন মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলকসহ খানজাহান আমলের অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। আছে খানজাহানের দিঘির ঐতিহ্যবাহী ‘কালা পাহাড়’ ও ‘ধলা পাহাড়’ কুমিরের মমি।

এই মসজিদে দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের নামাজ পড়ার সুযোগ রয়েছে। ফজর থেকে এশা পর্যন্ত নামাজের সময় প্রবেশের জন্য কোনো ফি প্রদান করতে হয় না। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত পুরাকীর্তি হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় ও ফি পরিশোধ করে এই মসজিদ ভ্রমণ করতে হয়।

সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারেন ষাট গম্বুজ মসজিদ চত্বরে। দেশী পর্যটকদের জন্য ফি ৩০ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৫০০ টাকা। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা।

একই ফিতে প্রবেশ করে মসজিদ কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে থাকা জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের। তবে জাদুঘরে প্রবেশের সময়সীমা ভিন্ন। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারেন জাদুঘরে। কিন্তু দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জাদুঘর বন্ধ রাখা হয়। সপ্তাহে রোববার সারাদিন বন্ধ থাকে জাদুঘরটি।

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত
দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পবিত্র ঈদের জামাত ষাট গম্বুজ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ষাট গম্বুজ মসজিদে পবিত্র ঈদের প্রধান জামাতে দেশ-বিদেশের প্রায় অর্ধলাখ মুসল্লি অংশ নেন।

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের বাগেরহাট প্রতিনিধি ঘুরতে আসা বিভিন্ন দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা আকলিমা বেগম বলেন, পরিবারসহ ষাট গম্বুজ মসজিদে ঘুরতে এসেছি। মসজিদের ভেতরে মহিলাদের নামাজের যে স্থান রয়েছে সেখানে নামাজ আদায় করেছি। খুবই ভালো লেগেছে।

যশোর থেকে ঘুরতে আসা মো. আবুল কালাম বলেন, আমার ভ্রমণ করতে খুব ভালো লাগে। এরকম বিশেষ বিশেষ কিছু ঐতিহ্য বাংলাদেশে আছে যা দেখে মনের মধ্যে খুবই তৃপ্তি লাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পুরোনো ঐতিহ্যগুলো দেখলে মন ভরে যায়।

গোপালগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা মাওলানা মো. হাকিম বলেন, পরিবারের সকলকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি বাগেরহাটের ষাট গম্বুজে। চারদিকের পরিবেশ সত্যিই অসাধারণ। এই প্রথম আমি এই ষাট গম্বুজ মসজিদে নামাজ পড়েছি। খুবই ভালো লেগেছে।

পটুয়াখালী থেকে ঘুরতে আসা মুস্তাহিদুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী ষাট গম্বুজ মসজিদে আমি আগেও এসেছি। বারবার এখানে আসতে মন চায়। আগের থেকে পরিবেশ অনেক ভালো হয়েছে। চারদিকের পরিবেশ খুব সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর।

স্থানীয় কালম উদ্দিন বলেন, রমজানের সময় শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা খতম তারাবি পড়ার জন্য আসেন। রমজানের সময় দিনের বেলায় মসজিদে দর্শনার্থীদের আনাগোনা কম থাকে। তবে যারা আসেন তারা যেন পবিত্রতা রক্ষা করে চলাফেরা করেন এই অনুরোধ করছি।

ষাট গম্বুজ মসজিদের ভারপ্রাপ্ত ইমাম মাওলানা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ৮১ গম্বুজ, ৬০ পিলার, ১০ মিনার ও চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি হয় রডবিহীন এই মসজিদ। আনুমানিক ৬০০ বছর আগে হজরত খানজাহান আলীর (রহ.) এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই মসজিদে জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। একসঙ্গে মসজিদের ভেতর দুই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, পবিত্র রমজান মাসে দুইজন হাফেজ খতম তারাবির নামাজ পড়ান। এ ছাড়া মুসল্লিদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা থাকে। দুই ঈদে বাগেরহাটে জেলার প্রধান জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি এতে অংশগ্রহণ করেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট জোনের উপ-পরিদর্শক মিন্টু মিয়া বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট জোন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুই শিফটে ডিউটি করে থাকেন। সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।